জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা- পর্বঃ ৩ (শেষ পর্ব) - ইনফোক্রাঞ্চ - ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

সর্বশেষ পোস্ট

ইনফোক্রাঞ্চ - ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

test banner

Post Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, September 26, 2017

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা- পর্বঃ ৩ (শেষ পর্ব)


অ্যাডমিশন প্রসেসিং থেকে ভিসা এপ্রুভ্যাল




অ্যাডমিশন সিস্টেম

জার্মানিতে ভর্তির জন্য দুই ধরনের সিস্টেম চালু আছে।
·        ওপেন অ্যাডমিশন   
·        এপটিচুড টেস্ট

ওপেন অ্যাডমিশন এর  ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যচেলরের ফলাফল ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ভর্তি নেওয়া হয়।
এপটিচুড টেস্ট এর  ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাইয়ের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষাও দিতে হয়। তাই চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ওপেন অ্যাডমিশন পদ্ধতিটিই ঝামেলামুক্ত।

আবেদনের পদ্ধতি

জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত দুইভাবে আবেদনের পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে
১. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বয়ং কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে আবেদন করা যায়।
২. ইউনি এসিস্ট নামের সংস্থা শিক্ষার্থীর কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় ৷
এ ক্ষেত্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য খরচ করতে হয় ৭৫ ইউরো (প্রায় সাত হাজার টাকা)। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে পরের প্রতিটির জন্য ১৫ ইউরো (আনুমানিক এক হাজার টাকা) করে দিতে হয়। বর্তমানে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই এই সংস্থার মাধ্যমে ভর্তি প্রসেস করে থাকে।


পড়তে আসার  প্রসেসিং সিস্টেম

জার্মানির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার জন্য প্রসেসিং ব্যবস্থা মূলত দুইটি ধাপে সম্পন্ন হয়-

·        অ্যাডমিশন লেটার প্রাপ্তি: আপনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিশন লেটার পেয়েছেন মানে এই নয়, আপনি জার্মানিতে আসতে পারবেন। আপনাকে এরপর পরবর্তী ধাপের জন্য অর্থাৎ জার্মান ভিসার ধাপটিও পাড়ি দিতে হবে।

·        জার্মান ভিসা প্রাপ্তি: এটা হচ্ছে জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আসার শেষ ধাপ। ভিসা পেয়ে গেলই জার্মানিতে আসার সব পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল।

অ্যাডমিশন লেটার প্রাপ্তির জন্য করণীয়

প্রথমেই আসা যাক অ্যাডমিশন লেটার প্রাপ্তির জন্য কী কী করণীয়-
1.  ইউনি এসিস্ট ওয়েবসাইটে আইডি খোলা 

   প্রথমেই ইউনি এসিস্ট ওয়েবসাইটে ঢুকে নিজের নামে একটি আইডি খুলতে হবে। তারপর যেখানে আবেদন করবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবজেক্ট সেকশনে ঢুকে নির্ভুল তথ্যগুলোই ফরমে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এখানকার আপলোড সেকশনে নিজের যাবতীয় সনদপত্র, ভাষার সনদপত্র, মোটিভেশন লেটার সংযুক্ত করতে হবে। ফরমটি অনলাইনে সাবমিট করলে অটো পিডিএফ কপি জেনারেট হবে। সেই ফরমটি প্রিন্ট করে নির্ধারিত জায়গাতে স্বাক্ষর করতে হবে।
2.  বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র পূরণ

     বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে ক্লিক করে পছন্দের সাবজেক্টের পেজে ঢুকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিতে হবে। সেটা নিজ হাতে পূরণ করতে হবে অথবা অনলাইনে পূরণ করে অটোজেনারেটেড পিডিএফ কপি প্রিন্ট করে নির্ধারিত স্থানে স্বাক্ষর করতে হবে।
3.  রিকোমেন্ডেশন লেটারস 

    যেখানে ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন সেই বিভাগের দুজন ক্ষেত্র বিশেষে তিনজন প্রফেসর (সহযোগী বা সহকারী প্রফেসর হলেও হবে) থেকে রিকোমেন্ডেশন লেটার নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অফিশিয়াল প্যাড ব্যবহার করতে হবে। রিকোমেন্ডেশন লেটারে অবশ্যই সিলেক্টেড সাবজেক্টের নাম ও কোথায় পড়তে যাবেন সেটা উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষক তাঁকে সেখানে পড়তে যেতে উৎসাহ প্রদান করছেন সে বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে।
4.  সার্টিফিকেটস 

     ব্যাচেলরের সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, আইইএলটিএস সার্টিফিকেট ও এসএসসির সার্টিফিকেট কোনো সরকারি উকিল থেকে নোটারি করতে হবে অথবা জার্মান অ্যাম্বাসি থেকে সত্যায়িত করিয়ে নিতে হবে
5.  মোটিভেশনাল লেটার 

    একটি মোটিভেশনাল লেটার লিখতে হবে। স্যাম্পল কপি গুগলে সার্চ দিলেই পাওয়া যায়। এখানে যে বিষয়ে পড়তে যাবেন সেই বিষয়টার ভালো লাগা ভালোবাসার কথাগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে হবে। লেখাগুলো যেন তৈলাক্ত না হয় এবং অনুপ্রেরণামূলক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
6.  ইউনি এসিস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার 

     ইউনি এসিস্ট ওয়েবসাইটে টাকা পাঠানোর জন্য ওয়েবসাইটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইল উল্লেখ করা আছে। আবেদনপত্রসহ পাসপোর্ট নিয়ে যেকোনো ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় শাখায় যেতে হবে। সেখান থেকে ৭৫ ইউরোর সমপরিমাণ টাকা ইউনি এসিস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে হবে। একটা প্রুফ কপি সেখান থেকে নিয়ে নিতে হবে। এখানে টাকা পাঠানোর দিক-নির্দেশনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষই দিয়ে দেবেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড (মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, পেপল) থাকলে সহজেই এই টাকা ট্রান্সফারের জটিলতা অবশ্য এড়ানো যায়।
7.  কাগজগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী সাজাতে হবে

     ক) টাকা পাঠানোর প্রুফ কপি।
খ) ইউনি এসিস্ট-এর আবেদনপত্র।
গ) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপত্র।
ঘ) ব্যাচেলরের সনদপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট ও এসএসসির সনদপত্রের নোটারাইজড বা সত্যায়িত কপি।
ঙ) মোটিভেশন লেটার।
চ) রিকোমেন্ডেশন লেটার দুটি বা তিনটি।
ছ) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইংরেজি মাধ্যমের কপি (যদি থাকে)।
জ) আইইএলটিএস-এর নোটারাইজড বা সত্যায়িত কপি।


8.  কুরিয়ার 

     কাগজগুলো স্ট্যাপল বা জেমসক্লিপে আটকে একটি এ-৪ সাইজের মোটা এনভেলপে ইউনি এসিস্টের নির্ধারিত ঠিকানায় (ইউনি এসিস্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে) পাঠাতে হবে। তবে সরকারি পোস্ট ব্যবহার না করে ডিএইচএল বা ফেডএক্সে কুরিয়ার করলে আবেদনপত্র কখন কবে পৌঁছাল সেটা ট্র্যাক করে জেনে আশ্বস্ত হওয়া যায়। আপনার লেটার ও টাকা ইউনি এসিস্টে পৌঁছানো মাত্র আপনাকে ইমেইল করে ইউনি এসিস্ট নিশ্চিত করবে।
তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ইউনি এসিস্ট আপনাকে দুটি ইমেইল করে আপনাকে আবেদনের ব্যাপারে আপডেট দিয়ে আশ্বস্ত করবে।
 প্রথম ইমেইলটি ব্যাচেলরের ইভালুয়েশন রিপোর্ট অর্থাৎ জার্মান গ্রেডে আপনার রেজাল্ট কেমন। দ্বিতীয় ইমেইলটি বলবে যে আপনার কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এরপর সব ঠিক থাকলে দুই-এক মাসের মধ্যেই আপনি অ্যাডমিশন লেটারটি পেয়ে যাবেন।


জার্মান ভিসাপ্রাপ্তির জন্য করণীয়

এবার আসছি জার্মান ভিসাপ্রাপ্তির জন্য কী কী করণীয়?
1.   জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকার ওয়েবসাইট ভিজিট করা 

     প্রথম কাজ হচ্ছে জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকার ওয়েবসাইট ভিজিট করা। সেখানে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের জন্য চেকলিস্ট দেওয়া থাকে।
2.  জার্মান ব্যাংকে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট 

 এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জার্মান ব্যাংকে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট করে সেখানে ৮৬৪০ ইউরো (আনুমানিক আট লাখ টাকা) জমা দিতে হবে।
 জার্মান ব্যাংক ওয়েব অ্যাড্রেস । যেখানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
এই টাকাটা আপনার নিজের অ্যাকাউন্টেই গচ্ছিত থাকবে। শুধুই দেখানো যে জার্মানিতে আপনি নিজের খরচ মেটাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকার ওয়েবসাইটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে ইউরো জমা দেওয়ার বিস্তারিত পদ্ধতি দেওয়া আছে। যেকোনো তথ্যজনিত সাহায্য লাগলে অ্যাম্বাসি খুব আন্তরিকভাবে সাহায্য করে থাকে। সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন অথবা ইমেইল বা ফোনেও কথা বলে নিতে পারেন।

3. হেলথ ইনস্যুরেন্স

 আপনাকে জার্মান অ্যাম্বাসি ঢাকার কিছু মার্ক করা হেলথ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ইনস্যুরেন্স করিয়ে নিতে হবে। কোম্পানি ভেদে তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। অ্যাম্বাসি ওয়েবসাইটে সার্চ দিলে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির তালিকাগুলো পাবেন।

4. চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত

এবার চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত করে ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ নিয়ে নিন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবার জন্য  ক্লিক করুন  ।প্রদত্ত লিংকে গেলে চেকলিস্ট দেখতে পাবেন।

5. মূল কাগজপত্র এক সেট সাজিয়ে সঙ্গে ভিসার জন্য আবেদনপত্র

মূল কাগজপত্র এক সেট সাজিয়ে সঙ্গে ভিসার জন্য আবেদনপত্র দুই সেট পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হবে এ ছাড়া চেকলিস্ট অনুযায়ী সকল কাগজপত্র দুই সেট ফটোকপি করে সাজাতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে ২৬ হাজার মতো টাকা। যার মধ্যে ৬০ ইউরো (আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা) ভিসা আবেদনের জন্য এবং নগদ ২০ হাজার টাকা আপনার সার্টিফিকেটগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য।

6. ভিসা ইন্টারভিউ

ভিসা ইন্টারভিউয়ের ১০ থেকে ১৫ মিনিট জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। খুব মাপকাঠি বজায় রেখে প্রশ্নকর্তার সব প্রশ্নের উত্তর মার্জিতভাবে দিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করতে হবে জার্মানিতে পড়াশোনা করাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য। মনে রাখতে হবে তিনি আপনার ভিসা ইচ্ছা করলে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দিতে পারেন। প্রশ্নকর্তার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ করে যদি সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে এবং তিনিও আপনার ব্যাপারে সন্তুষ্ট হোন তখন তিনি আপনার মূল কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে মূল পাসপোর্ট ও ফটোকপি করা কাগজগুলো রেখে দেবেন। এরপরে আপনার অপেক্ষার পালা। সবকিছু ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ৪০ দিনের মধ্যে আশা করা যায় জার্মানির ভিসা (তিন মাসের জন্য) আপনি পেয়ে যাবেন।




আরো পড়ুন-

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here