সৌদি রাষ্ট্রের জন্মকথা - ইনফোক্রাঞ্চ - ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

সর্বশেষ পোস্ট

ইনফোক্রাঞ্চ - ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

test banner

Post Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Friday, November 17, 2017

সৌদি রাষ্ট্রের জন্মকথা

আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের পিতা সৌদের নাম অনুসারে সৌদি রাষ্ট্রের নাম রাখা হয়েছে। এই পরিবারের বংশপরিক্রমা প্রাচীন আরবের বনু হানিফা গোত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে মোট তিনটি পর্যায় রয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৩২ সালে।


সৌদি রাজবংশ - InfoCrunchBD.blogspot.com




প্রথম সৌদি রাষ্ট্র

(১৭৪৪ খ্রি.-১৮১৮ খ্রি./১১৫৭ হি.-১২৩৩ হি.)


হিজরি বারো শ শতকের শুরুতে (অষ্টাদশ খ্রিস্টাব্দে) আরব রাষ্ট্রের কোনো সৈন্য ছিল না, স্থায়িত্ব ছিল না। উমাইয়া শাসন আমলেই রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রীয় কার্যক্রম হেজাজের হাতছাড়া হয়ে যায়। রাজধানী চলে যায় দামেশকে। আরব ভূখণ্ড তখন উমাইয়াদের শাসনামলেই ছিল। উমাইয়াদের পরে আসে আব্বাসীয়রা। তাদের আমলে রাজধানী দামেশক থেকে বাগদাদে চলে যায়। আব্বাসীয়দের পর ফাতেমীয়রা, তাদের পর মামলুক রাজারা আরবের ওপর চড়াও হয়।

৯২৩ হিজরিতে সৌদি আরব উসমানি খেলাফতের অধীনে চলে যায়। তত দিনেও আরবরা সংঘটিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। দীর্ঘ সময় শাসন করার পর উসমানি খেলাফত বিলুপ্ত হয়। এর পর মুহাম্মদ বিন সউদের নেতৃত্বে আরবদের নবজাগরণ শুরু হয়। মুহাম্মাদ বিন সউদ ইতিহাসের প্রথম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান সৌদি রাজবংশের পূর্বপুরুষ মুহাম্মদ বিন সউদ ছিলেন রিয়াদের নিকটস্থ দিরিয়া নামক একটি কৃষিবসতির প্রধান। তিনি অদম্য মরুযোদ্ধা ছিলেন। ১৭৪৪ সালে তিনি আরবের বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাবের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করেন। তাঁর সহায়তায় উসমানি খিলাফত থেকে আলাদা হয়ে ‘দিরিয়া আমিরাত’ নামে স্বতন্ত্র একটি ছোট্ট রাজ্য গঠন করেন। সেটিই প্রথম সৌদি রাজ্য।

সে রাজ্য গঠিত হয়েছে ইসলামের নামে এবং শিরক ও বিদআতমুক্ত বিশুদ্ধ ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি নিয়ে।

১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন সউদের মৃত্যু হলে তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হন। ১৮০১-১৮০২ সালে আবদুল আজিজ তুর্কি খিলাফতের কাছ থেকে ইরাক দখল করে নেন। এরপর ১৮০৩ সালে একজন শিয়া আবদুল আজিজকে দিরিয়ায় আসরের নামাজরত অবস্থায় হত্যা করে। এর আগে ১৭৯২ সালে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাবের ইন্তেকাল হয়। আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে সউদ বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতায় আসেন এবং তুর্কিদের পরাজিত করে ১৮০৩ সালে মক্কা ও ১৮০৪ সালে মদিনা দখল করে নেন। অটোমান সাম্রাজ্যের শাসকদের অব্যাহত আক্রমণ প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের ভিত নড়বড়ে করে তোলে। অবশেষে অটোমান শাসক ইবরাহিম পাশার একাধিক হামলায় আরবের বিভিন্ন শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাতছাড়া হয়ে যায় শাসনক্ষমতাও। 

দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র

(১৮২৪ খ্রি.-১৮৯১ খ্রি./১২৪০ হি.-১৩০৯ হি.)


দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তুর্কি বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন সউদ। অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রাণান্ত লড়াই করে তিনি পুনরায় আরব ভূখণ্ডে আরবীয়দের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনেন। ১৮১৮ সালে দিরিয়ায় প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের পতন হলে নিহত আবদুল্লাহর ‘তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ’ নামে এক ছেলে মরু অঞ্চলে পালিয়ে যান এবং বনু তামিম গোত্রে আশ্রয় নেন। পরে ১৮২১ সালে তিনি আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তুর্কি বিন আবদুল্লাহ ১৮২৪ সালে উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিসরীয় শাসকদের হটিয়ে আবার দিরিয়া এবং সঙ্গে রিয়াদ দখল করে নেন। রিয়াদকে রাজধানী করে ‘নজদ আমিরাত’ নামে ইতিহাসের দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য গঠন করেন তিনি। দ্বিতীয় সৌদি রাজ্যের আয়তন আগের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। কিন্তু সেটিও বেশি দিন প্রতিষ্ঠিত ছিলও না। ১৮৩৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহকে তাঁর এক জ্ঞাতি ভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান বিদ্রোহ করে হত্যা করেন। কিছুদিন মুশারি ক্ষমতায় থাকলেও পরে তাঁকে হত্যা করা হয় এবং তুর্কির ছেলে ফয়সাল নজদ আমিরাতের ইমাম নিযুক্ত হন। কিন্তু ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদি বাহিনীর হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে। ক্ষমতা চলে যায় উসমানি শাসক মুহাম্মাদ বিন রশিদের হাতে। ফলে তৎকালীন সৌদিদের শেষ উত্তরসূরি আবদুর রহমান বিন ফয়সাল তাঁর সহচরদের নিয়ে পালিয়ে যান। বিস্মৃত উষর বালুকাময় ‘রুব আল খালি’ মরুভূমি পাড়ি দিয়ে আবদুর রহমান তাঁর ছেলে আবদুল আজিজকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্বের মুররা নামক বেদুইন গোত্রে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। 

তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্র

(১৯০২ খ্রি./১৩১৯ হি.)


১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান বিন ফয়সাল আল সউদ। মৌলিক রাষ্ট্র হিসেবে এটি স্বীকৃতি লাভ করে ২৩ মে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯০১ সালে সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আবদুর রহমান তাঁর হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের সব আশা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ আবারও আশার আলো দেখেন। আবদুল আজিজ বিন সউদ ১৯০১ সালের শেষের দিকে কুয়েতের আমির মুবারকের কাছে উসমানিয়াদের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদ আক্রমণের জন্য সাহায্য চান। ১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইবনে সউদ সৈন্যসহ রিয়াদের মাসমাক দুর্গ আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেন। 


আবদুল আজিজ বিন সউদের রিয়াদ আমিরাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি রাজ্যের সূচনা হয়। এরপর সউদরা নজদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একে একে রাশিদিদের হটিয়ে একেকটি করে শহর রিয়াদ আমিরাতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে থাকেন। পরবর্তী সময় ১৯০৭ সালের মধ্যে সৌদিরা নজদের বিরাট এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে আসে। ১৯২৬ সালের শেষ নাগাদ পুরো হেজাজ দখলে নিয়ে নেয়। ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি আবদুল আজিজ ইবনে সউদ মক্কা-মদিনা ও জেদ্দার গোত্রীয় নেতাদের সমর্থনে নিজেকে হেজাজের ‘সুলতান’ ঘোষণা করেন। ১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ইবনে সউদ আগের নজদ ও বর্তমান হেজাজ মিলিয়ে Kingdom of Najd and Hejaz ঘোষণা করেন। চার মাস পর ২৭ মে জেদ্দা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom of Najd and Hejaz-কে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এ মর্মে রাজকীয় ফরমান জারি হয় যে এখন থেকে অধিকৃত আরব অঞ্চল ‘আল মামলাকাতুল আরাবিয়্যা আস-সাউদিয়্যাহ’ নামে পরিচিতি লাভ করবে। এর পর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here