শীতের এই ক্ষণে বারান্দায় বা উঠোনে বসে সকালের মিষ্টি রোদ পোহাচ্ছেন আর বইয়ের রাজত্বে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আনমনে এবং লেখার অনিন্দ্য শৈল্পিক সৌন্দর্যে ডুবে আছেন।হঠাত শুনলেন কে যেন আপনাকে ডাকছে হয়তবা কোনো কাজে।উঠে তাকালেন।বিষয়টা জরুরি।উঠতে হবে।প্রিয় বইটার মাঝে বুকমার্ক গুঁজে দিয়ে কাজে বেরোলেন।এর মাঝে কখনো ভেবেছেন কি কাগজের মাঝে আঁকিবুঁকি দিয়ে তৈরি বুকমার্ক আসলো কিভাবে?এর ইতিহাস?
ব্যাপারটা শুনতে অদ্ভুত ঠেকলেও এরও ইতিবিত্ত ঐতিহাসিকরা খুঁজেছেন, ফাইনালি বেরও করেছেন। আসুন শুনি।
এখনকার সময়ে প্রধানত কাগজের বুকমার্ক বেশি ব্যবহৃত হলেও লেদার,ফেব্রিক কিংবা কাঠ দিয়েও এটি বইপ্রেমিরা তৈরি করে থাকেন।ইতিহাসে বুকমার্ক শব্দটি প্রথম ব্যবহারের প্রথম রেফারেন্সগুলোর একটি হলো ম্যারি রাসেল মিটফোর্ডের ‘Recollections of a Literary Life’(১৮৫২)।সেখানে একটা সেন্টেনস ছিল-‘I had no marker and the richly bound volume closed as if instinctively’।এখানে Bookmarker সংক্ষিপ্তরূপ Marker লেখা হয়।আর আধুনিককালে এটিকেই Bookmark বলা হয়।ঐতিহাসিক বুকমার্কগুলো খুবই মূল্যবান এবং বিখ্যাত সব যাদুঘরে সংগৃহীত হয়।
বুকমার্কের আবির্ভাব খুব সম্ভবত খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দী থেকেই।তবে মিসরের সাকারার নিকটে একটি কপ্টিক কোডেক্স এর ভিতরে ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে একটি বুকমার্ক পাওয়া যায়।এটিকেই সবচেয়ে পূর্বেকার হিসেবে গণ্য করা হয়।এটি লৈখিক লেদার ও ভেলাম(লিখবার বা বই বাধাইয়ের নিমিত্ত বাছুরের চামড়াবিশেষ) দিয়ে সজ্জিত এবং এক ফালি লেদারের সাথে সংযুক্ত ছিল।ষোড়শ শতাব্দীতে যখন মূদ্রিত বই পাওয়া দুষ্কর ও প্রায় দুঃসাধ্য ছিল তখন বই নষ্ট না হওয়ার তাগিদে বুকমার্কের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।এখন শুনতে অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর মনে হলেও ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ-১ প্রথম কয়েকজন বুকমার্কের গর্বিত মালিকের একজন ছিলেন।ঊনিশ শতাব্দীতে মোটামুটিভাবে ১৮৬২ সালে থমাস স্টিভেন নামের এক তাঁতি সিল্ক দিয়ে বোনা,চিত্রসমেত এক ধরণের বুকমার্ক প্রস্তুত করেন যাকে স্টিভেনগ্রাফ বলা হয়।মজার বিষয় হলো, এ ধরণের বুকমার্কগুলো সেসময়কার ভিক্টোরিয়ান যুগে অ্যাপ্রেসিয়েটেড গিফট হিসেবে বিবেচিত হত। এর পরের সময়টায় বুকমার্কের ব্যবহার ধর্মীয় বইয়ে বিশেষভাবে প্রচলিত হয়। এরপর থেকে সিল্কের বোনা বুকমার্কের প্রচলন কমতে থাকলেও স্টিপপেপার অথবা কার্ডবোর্ডের বুকমার্কের চাহিদা আকাশচুম্বী হতে থাকে।
No comments:
Post a Comment