আসলে কি আমরা সঠিক জায়গায় সঠিক ডকুমেন্টটি পাঠাচ্ছি? কোনো ডকুমেন্টে কোনো তথ্যটি রাখবো এবং কোন তথ্যটি রাখবো না তা নিয়ে আমরা বেশ চিন্তিত থাকি।বন্ধুরা, আমি জানি আপনাদের মাঝে অনেকেই হয়তো এরকম দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তো চলুন লেখাটি পড়ে জেনে নেই আসলে বায়োডাটা, সিভি, রিজুমে, প্রোফাইল ও পোর্টফোলিও এর মধ্যে পার্থক্যগুলো কী কী?
বায়োডাটা :
বিয়ের জন্য যে ডকুমেন্ট তৈরি করতে হয় সেটিকে বলা হয় বায়োডাটা। এখানে একজন মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বেশি থাকে। আপনার ভাই-বোনেরা কে কোথায় কি কাজ করছেন ভাবী এবং ভগ্নিপতিরা কি করছেন , চাচা, ফুপু, খালা, মামারা কে কোথায় আছেন, আপনার পারিবারিক অবস্থান ,পিতা মাতা কে কি কাজ করতেন এবং এখন কি করছেন, আপনিই বা বর্তমানে কি করছেন ,আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডসহ সবধরনের পার্সোনাল তথ্য দিয়ে সাজাতে হয় বায়োডাটা। সাধারণত আমাদের দেশে বিয়ে শাদীর জন্য বায়োডাটা তৈরি করতে হয়।
সিভি :
উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে আবেদন করার সময় যে ডকুমেন্টটি পাঠাতে হয় সেটিকে বলা হয় সিভি। এতে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে যে বিষয়গুলোর উপরে আপনার দক্ষতা ছিল সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। আপনি শিক্ষানবিস থাকা অবস্থায় যে সব প্রজেক্টে কাজ করেছেন এবং সেসব কাজের ফলাফলগুলো উল্লেখ করতে হবে। আপনার থিসিস টপিক, শিক্ষাজীবনের যেকোনো পুরস্কার সিভিতে উল্লেখ করতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য আপনার পছন্দের বিষয় এবং ওই বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়াদি সিভিতে উল্লেখ করতে হবে । আপনার কোনো দেশীয় বা আর্ন্তজাতিক প্লাটফর্মে কোনো প্রকাশনা থাকলে সেটি সিভিতে উল্লেখ করতে হবে। কোনো কনফারেন্সে যোগদান করলে বা কোনো কম্পিটেশনে অংশগ্রহণ করলে সেটি সিভিতে উল্লেখ করতে হবে । আপনার ভাষাগত দক্ষতা (IELTS বা GRE স্কোর বা অন্য ভাষার দক্ষতা থাকলে সেটি সিভিতে উল্লেখ করা যেতে পারে। সিভির দৈর্ঘ্য দুই পেজের বেশি না হওয়াই ভালো। বাইরের দেশের প্রফেসরকে সিভির সঙ্গে লেটার অফ মোটিভেশন (LOM) অথবা স্ট্যাটমেন্ট অফ পারপাস (SOP) পাঠাতে হতে পারে । আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ের উপরে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে চাচ্ছেন সেখানে কেন আপনি নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করেন সেটিকেই সাবলীল ভাষায় এই SOP বা LOM এর মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়। আপনি উচ্চশিক্ষা লাভের পর দেশে ফিরে গিয়ে এই শিক্ষাকে দেশের উন্নয়নের কাজে লাগাবেন কিংবা আরও গবেষণা করবেন এই ধরনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা মূলক লেখা প্রফেসরদের আপনাকে নির্বাচনের ব্যাপারে আরও আগ্রহী করে তুলবে।
রিজুমে :
যখন কোনো ব্যক্তি তার ছাত্রজীবন শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চায় তখন তাকে যে ডকুমেন্টটি তৈরি করতে হয় সেটিকে বলা হয় রিজুমে। সিভিতে যেসব তথ্য উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে তার কোনো কিছুই রিজুমেতে থাকা চলবে না । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন ফ্রেশারের রিজুমেতে তার ক্যারিয়ার অবজেকটিভ (জীবনের লক্ষ্য), প্রধান দক্ষতাগুলো, খণ্ডকালীন চাকরির অভিজ্ঞতা , কো-কারিকুলাম একটিভিটিজ, সেচ্ছাসেবকমূলক কাজের অভিজ্ঞতা, সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কাজের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়। আর অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দেখা হয় তার কর্মজীবনের অর্জন গুলোকে। আমাদের মাঝে অনেকেই নিত্যদিনের কাজ এবং কাজের ফলাফল এই দুইয়ের মাঝে প্রার্থক্য করতে পারেন না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইনফোগ্রাফিক কিংবা ডিজাইন সিভির গ্রহণযোগ্যতা একদমই কম। একপেজের রিজুমেও অনেক মানবসম্পদ বিভাগের কর্মী ভালো দৃষ্টিতে দেখেন না। আবার অনেক বড় দৈর্ঘ্যরে রিজুমেও কেউ পড়ে দেখে না। কারণ একটি রিজুমে যাচাই বাছাই করতে একজন চাকরিদাতা সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করেন তাই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ মানব সম্পদ বিভাগের প্রধানরা শূন্য থেকে দশবছর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুই পেজের এবং দশ বছরের অধিক অভিজ্ঞতা থাকলে সর্বোচ্চ তিন পেজের রিজুমে তৈরির ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে কোনো জিনিসটি রিজুমেতে থাকবে এবং কোনটি থাকবেনা, কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কোনটি কম গুরুত্বপূর্ণ সেটি নির্বাচন করা অনেকের কাছে বেশ চ্যালেন্জিং। তাই এক্ষেত্রে যে কোম্পানিতে যে পদের জন্য আবেদন করছেন সেই সার্কুলারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আংশিক পরিবর্তন করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে রিজুমে পাঠালে ইন্টারভিউ কল পাওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। রিজুমের সঙ্গে সব সময় পাঠাতে হবে কভার লেটার। আপনি কেন সেরা, আপনি কোম্পানিতে কিভাবে অবদান রাখতে পারবেন, সেসব কিছুই আপনাকে এক পৃষ্ঠায় গুছিয়ে লিখতে হবে। কভার লেটারকে রিজুমের সারাংশ বলা হয়।
প্রোফাইল :
একজন ব্যক্তি যখন ক্যারিয়ারের উচ্চশিখরে পৌঁছান, যখন তার অর্জনগুলো এত বেশি যে তাকে যাচাই বাছাই করতে সিভি কিংবা রিজিউম কোনটারই প্রয়োজন হয়না তখন তার অর্জন গুলোকে প্রকাশ করার জন্য যে ডকুমেন্টটি ব্যবহার করা হয় সেটিকে বলা হয় প্রোফাইল। বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিজেকে প্রকাশ করার জন্য প্রোফাইল ব্যবহার করে থাকেন। যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদেরকেও নিজের একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হয়। এই প্রোফাইলে আপনার দক্ষতা ও অর্জনগুলোর দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করবেন তখন সেই প্রতিষ্ঠানেরও থাকবে একটি প্রোফাইল। প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল লেখার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের পণ্য বা সেবা দিয়ে থাকেন এবং কারা এই পণ্য বা সেবা নিয়েছেন ও তাদের মতামতের সনদপত্র দিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করা হয় ।
পোর্টফোলিও :
যখন আপনি অনেকগুলো প্রজেক্টে কাজ করেছেন তখন সবগুলো প্রজেক্ট মিলে গঠিত হয় আপনার পোর্টফোলিও। অথবা আপনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সবগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল মিলে গঠিত হবে আপনার গ্রুপের পোর্টফোলিও ।
No comments:
Post a Comment