৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম সুশান্ত পালের বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ।
সাধারণ জ্ঞানের ২০ পরামর্শ
আমি যখন বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন সবচেয়ে কম পারতাম (প্রায় পারতাম না বললেই চলে) সাধারণ জ্ঞান। জানুয়ারির ৫ তারিখ পরীক্ষা ধরে নিয়ে প্রিলির জন্য হাতে মাত্র এক মাস থাকলে আমি যা যা করতাম বলে আপাত ভাবনায় মনে হয়, তা-ই লিখছি:
১. পুরো পেপার না পড়ে শুধু দরকারি শিরোনামগুলো পড়ে নিতাম। এ সময়ে কলাম আর আর্টিকেল পড়ার অত সময় নেই।
২. বিভিন্ন গাইড থেকে প্রতিদিন অন্তত তিন-চার সেট মডেল টেস্ট দিতাম।
৩. জব সল্যুশন এবং প্রিলির ডাইজেস্ট থেকে বারবার আলোচনাসহ প্রশ্নোত্তরগুলো দেখতাম।
৪. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট নিউজসহ এই ধরনের বিভিন্ন বইয়ের প্রিলির জন্য স্পেশাল সংখ্যাগুলো কিনে পড়ে ফেলতাম।
৫. আমার যে বন্ধুরা সাধারণ জ্ঞানে আমার চেয়ে ভালো, তাদের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলা অবশ্যই বন্ধ করে দিতাম।
৬. কী কী পারি না, সেটা নিয়ে মাথা খারাপ না করে, অন্য বিষয়গুলো ভালো করে দেখে নিতাম। বিসিএস পরীক্ষা সাধারণ জ্ঞানে পাণ্ডিত্যের খেলা নয়।
৭. প্রতিদিন গড়ে ১৫ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করলে ৩০ দিনের মধ্যে সাধারণ জ্ঞানের জন্য সময় দেওয়া যায় খুব বেশি হলে ৭০ ঘণ্টা। আর এত কম সময়ে রেফারেন্স বই না পড়াটাই বেটার।
৮. পড়ার সময় শুধু এটা মাথায় থাকত, যা পড়ছি, তা পরীক্ষার জন্য লাগবে কি লাগবে না। নিশ্চয়ই এখন জ্ঞানার্জনের সময় নয়।
৯. যত বেশি বাদ দিয়ে পড়া যায়, ততই ভালো। এতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো একাধিকবার পড়া যাবে।
১০. ধীরে ধীরে পড়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে পড়ার চেয়ে খুব দ্রুত বেশির ভাগ পড়ে নেওয়াটা ভালো। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
১১. চারটা রেফারেন্স বই পড়ার চেয়ে তিনটা গাইড বইয়ের প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে ফেলাটা অনেক বেশি কাজের।
১২. এখন বিসিএস প্রিলির সিলেবাস ধরে সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় নেই। যত বেশিসংখ্যক, তত বেশি প্রশ্নোত্তর প্রশ্নব্যাংক, গাইড বই, ডাইজেস্ট থেকে পড়ে নিতাম।
১৩. বারবার পড়লেও মনে থাকে না, এ রকম অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন আছে। সেগুলো মনে রাখার চেষ্টা না করে ওই একই সময়ে পাঁচটা কঠিন প্রশ্নের বদলে ২০টা সহজ প্রশ্ন মাথায় রাখার চেষ্টা করতাম। অহেতুক এবং অনর্থক জেদ পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট করে।
১৪. সাল, তারিখ, সংখ্যা, চুক্তি, নানা তত্ত্ব, সংস্থা, বৈঠক এসব বারবার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করতাম।
১৫. সাধারণ জ্ঞানের অনেক আগের পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। সেগুলো বাদ দিতাম।
১৬. গুগলে ইংরেজিতে কিংবা অভ্রতে বাংলায় টাইপ করে করে অনেক প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এতে অনেক সময় বাঁচে।
১৭. সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানা আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদর দপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতাটিতে নিয়মিত চোখ বুলাতাম।
১৮. ম্যাপ মুখস্থ করা, ছড়া-গান-কবিতা-গল্প দিয়ে নানা ফালতু তথ্য মনে রাখা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী আর মুদ্রার নাম মুখস্থ করা, জোর করে হলেও সংবিধান কণ্ঠস্থ করা, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে রাজ্যের সংখ্যাযুক্ত জিনিসপত্র মাথায় বোঝাই করাসহ বোকা বোকা আত্মতৃপ্তিদায়ক পড়াশোনা করার সময় এখন নয়। ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য!’
১৯. চমকে যাওয়ার প্রশ্নে চমকে যাওয়ার অভ্যাস থেকে সরে আসতাম। সবাই যা পড়ছে, আমাকেও তা পড়তে হবে—এই ধারণা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষতিকর।
২০. বাইরে ঘুরে ঘুরে ঘোরাঘুরি ভালো হয়, কিন্তু পড়াশোনা কম হয়। এই ৩০ দিনে বাসায় নিজের মতো করে না পড়ে যত ঘণ্টা বাইরে ঘোরা হবে, নিজের কফিনে ততটা পেরেক মারা হয়ে যাবে। এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন রেজাল্ট বের হওয়ার পর!
আমি বিশ্বাস করি, খেলার রেজাল্ট হয় সব সময়ই খেলা শেষে; খেলার আগেও নয়, মাঝেও নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত রেজাল্ট বের না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কারোর চেয়েই কোনো অংশে কম নই। প্রস্তুতি ভালো হলেই যেমন পাস করা যায় না, তেমনি প্রস্তুতি খারাপ হলেই ফেল করা যায় না। ভালো প্রস্তুতি নেওয়া অপেক্ষা ভালো পরীক্ষা দেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই কয় দিনে আপনি পড়াশোনা করার সময়ে আপনার সর্বোচ্চ পরিশ্রমটা দিয়ে বুঝেশুনে প্রস্তুতি নিলে আপনি প্রিলিতে অবশ্যই পাস করে যাবেন। আগে কী পড়েননি, সেটা নয়; বরং এই এক মাসে কী পড়বেন, সেটাই আপনার প্রিলিতে পাস কিংবা ফেল নির্ধারণ করে দেবে।
No comments:
Post a Comment