৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম সুশান্ত পালের বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ।
বাংলার প্রস্তুতি
বাজারের সব সেট গাইড বই কিনে ফেলুন, সঙ্গে কিছু রেফারেন্স বই। বইয়ের পেছনে বিনিয়োগ করুন, কাজে লাগবে। বেশি বেশি প্রশ্নের ধরন দেখুন। নিজের সাজেশন নিজেই তৈরি করুন, সম্ভব হলে অন্তত চার-পাঁচ সেট। চেষ্টা করবেন, প্রতি পৃষ্ঠায় অন্তত একটি উদ্ধৃতি, ডেটা, টেবল, চার্ট কিংবা রেফারেন্স, কিছু না-কিছু দিতে। লেখা সুন্দর হলে ভালো, না হলেও সমস্যা নেই৷ পরীক্ষায় অনেক দ্রুত লিখতে হয়৷ তাই প্রতি তিন থেকে পাঁচ মিনিটে এক পৃষ্ঠা লেখার অভ্যাস করুন৷ প্রস্তুতি শুরু করার আগে দুটো ব্যাপার মাথায় রাখুন। এক—কী কী পড়বেন, সেটা ঠিক করার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, কী কী পড়বেন না। দুই—মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই; শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ৬০ ভাগ ভুলে গিয়ে বাকি ৪০ ভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷ আমি নতুন সিলেবাসের আলোকে প্রস্তুতি-কৌশল নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। আজ লিখছি বাংলা নিয়ে।
বাংলা ১ম পত্র
ব্যাকরণ আগের বছরের প্রশ্নগুলো, গাইড বই, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ, হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা, সৌমিত্র শেখরের দর্পণ থেকে টপিক অনুযায়ী পড়ে নিন। ছয়টি বাক্যে প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ প্রকাশ লেখার সময় নিজের মতো করে সহজ ভাষায় লিখুন। এটিতে উদাহরণ দেওয়ার দরকার নেই। এই অংশের উত্তর করতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
ভাবসম্প্রসারণ আগের বছরের প্রশ্নগুলো, গাইড বই, দর্পণ, ঢাকা ও কলকাতার কিছু লেখকের বই থেকে এই অংশটা দেখতে পারেন। খুব প্রাসঙ্গিক ২০টি বাক্যে এটি লিখতে হয়। এই ২০টি বাক্য সময় নিয়ে লিখুন। উদাহরণ আর উদ্ধৃতি দিতে পারেন। লাগুক ৪০ মিনিট; খেয়াল রাখবেন—প্রতিটি বাক্যের গাঁথুনি যেন খুবই চমৎকার হয়।
সারমর্ম দু-তিনটি সহজ সুন্দর বিমূর্ত বাক্যে লিখতে হবে। সময় লাগতে পারে ২০ মিনিট। এ অংশটির জন্য সাজেশন প্রস্তুত করে বিভিন্ন বই থেকে নোট করে পড়লে খুব ভালো হয়।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর, আগের বছরের প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে পড়ুন, কী কী ধরনের প্রশ্ন হয় না, সেটা সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা নিন। এরপর গাইড বই, লাল নীল দীপাবলি, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস—এসব বই থেকে বাদ দিয়ে পড়ুন। এ অংশটি সবার শেষে উত্তর করতে পারেন। উদ্ধৃতি ছাড়া অবশ্যই লিখবেন না।
বাংলা ২য় পত্র
ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ: এ অংশটি ইংরেজি পার্ট-বিতেও আছে। মোট নম্বর ১৫+২৫+২৫=৬৫। আগের প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করলে দেখবেন, খুব একটা সহজ অনুবাদ বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণত আসে না। এই অংশটা একটু ভিন্নভাবে পড়তে পারেন। পত্রিকার সম্পাদকীয় নিয়মিত অনুবাদ করুন। কাজটি কষ্টকর, কিন্তু খুবই ফলপ্রসূ।
কাল্পনিক সংলাপ: বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে ধারণা বাড়াতে হবে। নিয়মিত পত্রিকায় চোখ রাখুন (বিশেষ করে গোলটেবিল বৈঠকগুলোর মিনিটস), টক শো দেখুন, গাইড বই থেকে বিভিন্ন টপিক ধরে নিজের মতো করে সহজ ভাষায় লেখার চর্চা করুন।
পত্রলিখন: আগের বছরগুলোর প্রশ্নের ধরন দেখে হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা আর গাইড বই থেকে পড়তে পারেন। আপনি যে যে ধরনের পত্র লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেগুলোর ওপরই প্রস্তুতি নেবেন। যেমন ব্যক্তিগতপত্র লিখতে চাইলে ভাষার ব্যবহারের দিকটা মাথায় রাখতে হবে। এই অংশে লেখার ফরম্যাটের ওপর আলাদা নম্বর বরাদ্দ থাকে।
গ্রন্থ-সমালোচনা: কোন কোন বই পড়তে হবে সেটি ঠিক করে না দিলে এই অংশ নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব না। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। পেলে পরে লিখব।
রচনা: এই অংশটির পড়ার সময় ইংরেজি রচনা, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বড় প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারেন। আগের বছরের প্রশ্ন দেখে কোন ধরনের রচনা আসে, সেটি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যেকোনো তিনটির ওপর প্রস্তুতি নিন। সাজেশন প্রস্তুত করে ইন্টারনেট, গাইড বই, রেফারেন্স বই থেকে পড়বেন। মাইন্ড-ম্যাপিং করে পয়েন্ট ঠিক করতে থাকুন, আর যত বেশি সম্ভব তত লিখতে থাকুন। প্রচুর উদ্ধৃতি দিন।
No comments:
Post a Comment