আপনি যদি একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাহলে ট্রু কলার সম্পর্কে শুনে থাকার কথা। ইংরেজিতে যদিও এটি ট্রুকলার/ Truecaller বলে লেখা হয়, তবে এখানে আমি উচ্চারণ/পড়ার সুবিধার্থে শব্দটি একটু ভেঙে ট্রু কলার হিসেবে লিখেছি। সে যাই হোক, পাঠক বুঝলেই হলো। এবার আসল কথায় আসি। ট্রু কলার ব্যবহার করার সুবিধা হচ্ছে, এই অ্যাপটি ইনস্টল করা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই মোবাইলে কল কিংবা এসএমএস এলে কল ও এসএমএস দাতার নাম স্ক্রিনে দেখা যায়। অর্থাৎ, আপনার ফোনে যদি একজনের নাম্বার সেইভ করা না থাকে, তারপরেও ট্রু কলার ইনস্টল করা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপটি আননন (অচেনা) নম্বরের ব্যবহারকারীর নাম বলে দিতে পারে। প্রায় ৫ কোটি ব্যবহারকারী সমৃদ্ধ ট্রু কলার অ্যাপ আপনার কাছে কিছুটা ম্যাজিকের মত মনে হতে পারে। তবে ট্রু কলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছুটা সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে।
ট্রুকলার কীভাবে কাজ করে?
খুবই সময়োপযোগী প্রশ্ন। ট্রু কলার কোনো ম্যাজিক না। এটি আসলে কমিউনিটি নির্ভর একটি সার্ভিস। তবে অনেকেই কিছু না জেনে ট্রু কলারকে তথ্য দিয়ে থাকেন। যদিও তা না হলে ট্রু কলার আজকের এই পর্যায়ে যেতে পারত না।
মোবাইলে ট্রু কলার ইনস্টল করে এতে একাউন্ট খুলে সাইন ইন করার পর ট্রু কলার প্রথমেই আপনার ফোনবুকে থাকা সকল কনটাক্ট (নাম ও ফোন নম্বর সহ) তাদের সার্ভারে আপলোড করে দেয়। ফলে, আপনার বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও আশেপাশের যেসকল লোকজনের ফোন নাম্বার আপনার ফোনে সেইভ করা ছিল, তা ট্রু কলার জেনে যায়। সেই নাম্বার ও নামগুলো সার্ভারে রেখে দেয় ট্রু কলার। এভাবেই বিভিন্ন ফোন নম্বরের ব্যবহারকারীর নাম জেনে নেয় ট্রু কলার, যা পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যবহারকারীর ফোনে সেইভ না থাকা নম্বরের ক্ষেত্রে কলার আইডি দেখাতে কাজে লাগে।
মনে করুন, আপনার বন্ধু ‘ক’ এর নম্বর আপনার ফোনে ‘ক’ নামে সেইভ করা আছে। আমার ফোনে ‘ক’ এর নম্বর সেইভ করা নেই। আপনি ট্রু কলার ইনস্টল করলে আপনার ফোন থেকে ‘ক’ এর নম্বর ও নাম ট্রু কলার সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে। এরপর আমি যদি ট্রু কলার অ্যাপ আমার ফোনেও ইনস্টল করি, আর আপনার বন্ধু ‘ক’ যদি আমাকে কল করেন, তাহলে ট্রু কলার আমাকে জানিয়ে দেবে যে এই নম্বরটি ‘ক’ এর। যদিও আমার ফোনে ‘ক’ এর নাম্বার সংরক্ষণ করা নেই। তবুও ট্রু কলার আপনার কাছ থেকে ‘ক’ এর নাম্বার নিয়ে আমাকে জানিয়ে দিল যে এই নম্বরটি ‘ক’ এর।
সুতরাং, ট্রু কলার ইনস্টল করলে আপনার ফোনে থাকা সকল কনটাক্ট ট্রু কলারের সার্ভারে চলে যাবে। আপনি যদি মনে করেন এতে আপনার প্রাইভেসির ক্ষতি হবে, তাহলে ট্রু কলার ব্যবহার করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন।
আপনি কারো নম্বর সার্চ করলে সেই ব্যক্তি তা টের পাবে
এটা ট্রু কলারের একটি ফিচার। আপনি যদি কোনো ট্রু কলার একাউন্টধারীর ফোন নম্বর সার্চ করে তার তথ্য দেখেন, তবে ট্রু কলার সেটা মনে রাখবে। ট্রু কলার অ্যাপের মধ্যে একটি অপশন আছে যা ওপেন করলে দেখা যায় যে কে কে উক্ত একাউন্টের তথ্য চেক করেছে। আর যেহেতু ট্রু কলার একাউন্ট না থাকলে আপনি এর ডিরেক্টরি এক্সেস করতে পারবেন না, সুতরাং আপনি যাদেরকে সার্চ করবেন, তারাও ট্রু কলার একাউন্টধারী হলে আপনার তথ্য পেয়ে যাবে।
ট্রু কলার ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করে
বলাই বাহুল্য, ট্রু কলার অ্যাপটি সার্ভারের সাথে যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। তবে, একবার কোনো নম্বর তার ব্যবহারকারীর নামসহ আপনার ফোনে প্রদর্শন করার পর পুনরায় সেই নম্বর থেকে কল এলে ইন্টারনেট ছাড়াই আগেরবার সেইভ করা তথ্য থেকে ব্যবহারকারীর নাম দেখাতে পারে ট্রু কলার। নেট কানেকশন থাকলে এটি নিয়মিত বিরতিতে ডাটাবেজ আপডেট করে নেয়।
ট্রু কলার থেকে আপনি আপনার তথ্য মুছে ফেলতে পারবেন
আপনি যদি চান, তাহলে ট্রু কলার সার্ভার থেকে আপনার ফোন নম্বর ও নাম মুছে ফেলতে পারেন। যদিও, পরবর্তীতে এটি হয়ত কোনো এক সময় পুনরায় আপনার ফোন নম্বর অন্যদের ফোন থেকে নিয়ে নিতে পারে। তবে সেজন্য আপনাকে নিয়মিত ট্রু কলার চেক করে দেখতে হবে। ট্রু কলার থেকে আপনার নম্বর মুছতে চাইলে https://www.truecaller.com/unlisting ঠিকানা ভিজিট করুন। আপনার ফোন নম্বর লিখে ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার নম্বর ট্রু কলার থেকে মুছে যাবে। আপনি যদি ট্রু কলার একাউন্টধারী হন তবে আনলিস্টিং করার আগে আপনাকে ট্রু কলার একাউন্ট ডিএক্টিভেট করতে হবে।
No comments:
Post a Comment