মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুরা- পর্ব ২ - ইনফোক্রাঞ্চ - ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

সর্বশেষ পোস্ট

ইনফোক্রাঞ্চ - ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

ছড়িয়ে পড়ুক নতুন কিছু জানার আগ্রহ

test banner

Post Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday, December 30, 2017

মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুরা- পর্ব ২

যে সকল ব্যক্তি বাংলাদেশী নাগরিক না হওয়া সত্বেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন তাদের সম্মানার্থে বাংলাদেশ সরকার "মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা" -এ ভূষিত করেন ১২৯ জন আন্তর্জাতিক নাগরিক ও সংস্থাকে। যার মধ্যে ৪৭ জন ভারতীয় ব্যক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান, ১১জন রাশিয়ান, ২২ জন মার্কিন, ১৪ জন ব্রিটিশ ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা, ৪ জন জাপানিজ, ৪ জন জার্মান ।এছাড়াও নেপাল, ভিয়েতনাম সহ আরও ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিক ও সংস্থা।
মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুরা- পর্ব ২

অ্যান্থনি মাসকারেনহাস


জন্মসূত্রে ভারতীয় গোয়ানীজ এবং শিক্ষা ও বসবাস সূত্রে পাকিস্তানী, পেশায় সাংবাদিক। একাত্তরের এপ্রিলে করাচীস্থ ‘দি মর্নিং সান’ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে আরও কয়েকজনের সাথে কিছুদিন এদেশে কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশ্য ছিল তারা পুর্ব পাকিস্তানের অবস্থা গোপনরেখে সারা বিশ্বে ইতিবাচক সংবাদ প্রচারনার ।  সকলে সে অনুযায়ী কাজ করলেও বাদ সাধলেন অ্যান্থনি মাসকারেনহাস।



অ্যান্থনি মাসকারেনহাস
পাক বাহিনী কর্তৃক করা বর্বরতম হত্যাকান্ড তথা বাঙালী নিধনের নির্মম চিত্র সরাসরি প্রত্যক্ষ করে তার বিবেকের বিরুদ্ধে যেতে না পেরে ১৮ই মে এইসব গনহত্যার চিত্র সংগ্রহ করে পালিয়ে যান লন্ডনে। ১৩ জুন, ১৯৭১ লন্ডনের ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকার প্রথম পাতায় পূর্ব পাকিস্তানের হনহত্যা নিয়ে ‘জেনোসাইড’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশ করে অন্তর্জাতিক অঙ্গনে হৈ চৈ ফেলে দেন। সমগ্র বিশ্ব বিবেক জাগ্রত করন বাঙ্গালীদের প্রতি সমর্থন অর্জনে  অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। সেই রিপোর্টে ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বর্বরতা, পঞ্চাশ লাখের মত শরণার্থীর ভারতে আশ্রয় নেয়া, কলেরা, দুর্ভিক্ষে অগণিত মানুষের মৃত্যু, হাজার হাজার নারী ধর্ষনের কাহিনী, শিশুহত্যা- সব প্রকাশ হতে থাকলো।

পরবর্তীতে তিনি The Rape of Bangladesh–1971 এবং Bangladesh: A Legacy of Blood-1986 নামক দু’টি গ্রন্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গনহত্যা এবং পরবর্তী ঘটনাবলী তুলে ধরেন। 

১৯৮৬ সনের ৬ই ডিসেম্বর পৃথিবী ত্যাগ করেন আমাদের  ক্রান্তিকালে পাশে দাঁড়ানো এই সুহৃদ।

জে এফ আর জ্যাকব

যেসকল বিদেশী বন্ধুদের কারণে আমাদের বিজয় ত্বরান্বিত হয়ে তাদের মধ্যে সবচাইতে প্রধান ভূমিকা ভারতের লে. জেনারেল (অব.) জে এফ আর জ্যাকব- এর । 

ইরাকী বংশদ্ভূত ইহুদী পরিবারের সন্তান জ্যাকবের জন্ম কলকাতায় এবং শিক্ষা জীবন দার্জিলিং ও যুক্তরাষ্ট্রে । তৎকালীন মেজর জেনারেল পদপ্রাপ্ত তিনি একাত্তরে ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অংশগ্রহণের  অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রেখেছিলেন অসামান্য অবদান। 

জে এফ আর জ্যাকব
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীদের জন্য ক্যাম্প স্থাপন, ক্যাম্পগুলোর পুনর্গঠন, প্রশিক্ষণ দেয়া, অস্ত্র-রসদ জোগানসহ যৌথ অভিযানের দ্বারা বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত জয়ে অসামান্য অবদান রাখা ভারতীয় বাহিনীর অনস্বীকার্য অবদানে জেনারেল জ্যাকবের বিশাল ভূমিকা ছিল। 

তার নেতৃত্বে ঢাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে এবং তার দূর্ঘর্ষী চতুরতার সাহায্যে তিনি একক বৈঠকে পাকিস্তানী বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট নিয়াজী ও ঢাকায় অবস্থানরত তার ২৬ হাজার সেনাকে মাত্র ৩ হাজার  সদস্যের মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। একাত্তরের ১৬মার্চের রেসকোর্সে এই আত্মসমর্পন ইতিহাসের একমাত্র প্রকাশ্য আত্মসমর্পন। এই অভিজ্ঞতা তিনি  পরবর্তীতে তার Surrender at Dacca: Birth of a Nation বই এ বর্ণনা করেন।

৯০ এর দশকে বিজেপি-তে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে গোআ ও পাঞ্জাবের গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  ১৩ জানুয়ারী, ২০১৬ সালে এই মহানায়কের মৃত্যু হয়।

সায়মন ড্রিং

মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম বিদেশী সাংবাদিক যিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরী করে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেন পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতা, নৃশংসতা ও গণহত্যার চিত্র তিনি হলেন ডেইলি টেলিগ্রাফের সাংবাদিক সায়মন ড্রিং।

ইংল্যান্ডের নরফোক এলাকায় জন্ম নেয়া সায়মন ড্রিং ছিলেন ২৫শে মার্চের হত্যাযজ্ঞ শুরু করার প্রাক্কালে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বন্দী বিদেশী সাংবাদিকদেরকে একজন। ঢাকার সংবাদ ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকাকে সাংবাদিকশূণ্য করে পরদিন সবাইকে বিমানবন্দরে নিয়ে তুলে দেওয়া হয় বিমানে।

কিন্তু হোটেলে লুকিয়ে থাকা সায়মন পরদিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ কারফিউ উঠে গেলে হোটেল কর্মচারীদের সহযোগিতায় ছোট্ট একটি মোটরযানে করে ঘুরে বেড়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং প্রত্যক্ষ চিত্র তুলে আনেন তিনি তাঁর প্রতিবেদনে। 

৩০শে মার্চ "ট্যাঙ্কস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান" শিরোনামে লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া এই প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। এর জন্যে সেবছর তিনি ইউকে রিপোর্টার অফ দ্য ইয়ার ভূষিত হন। এছাড়াও তূর্কী ও ইরানী গৃহযুদ্ধ এ সাংবাদিকতার জন্য  তিনি নানা আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হন।

৯৭'সালে একুশে টিভিতে যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বর্তমানে যমুনা টিভিতে প্রধান সম্প্রচার অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সিডনি শ্যানবার্গ ১৯৩৪ সালে আমেরিকার ক্লিনটন মাসাচুয়েটস এ জন্মগ্রহন করেন। ২৭ এ মার্চ ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সায়মন ড্রিং এর সাথে জীবনবাজি রেখে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের এই সাংবাদিক। 

তিনি পুরো যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর অসংখ্য খন্ড খন্ড প্রতিবেদন পাঠান যার অধিকাংশ ছিল শরণার্থী বিষয়ক। । ঢাকার সাহিত্য প্রকাশ তার অসংখ্য প্রতিবেদনের একটি নির্বাচিত সংকলন "ডেটলাইন বাংলাদেশ-নাইন্টিন সেভেন্টিন ওয়ান" প্রকাশ করে।

ইন্দিরা গান্ধী


ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু এর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন একাত্তরে বাংলাদেশের সবচেয়ে এমন বন্ধু যার সহযোগীতা ছাড়া যুদ্ধজয় প্রায় অসম্ভব ছিল।

যিনি শরনার্থী আশ্রয়, মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং যৌথবাহিনীর সহযোগিতা দ্বারা অকৃত্রিম সাহায্য করেন।


ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার বাবার পর ২য় সর্বাধিককাল ব্যাপী ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজ দেহরক্ষীদের দ্বারা নিহত হন তিনি।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here