ধর্মপ্রচারের সার্থে "ডাভ" পরিবার ইংল্যান্ড থেকে সুদূর আফ্রিকার বন্য জনপদে আসে। পরিবারের প্রধান কর্তা মি.ডাভ তার ইচ্ছাতেই মূলত ইংল্যান্ডের এত আরামদায়ক পরিবেশ ছেড়ে এই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে আসা তার সাথে তারা নিয়ে এসেছে তাদের অতীতের কিছু সুখকর স্মৃতি।
কিন্তু তারা কি চাইলে পারতোনা ইংল্যান্ডেই ধর্মপ্রচারের কাজ চালিয়ে যেতে?
কিন্তু তাদের যে কোনো একটা "কারণ" এই আফ্রিকার রুক্ষপ্রকৃতিতে নির্দয় ভাবে এনে ছুড়ে ফেলেছে।
তাহলে কি সেই কারণ?
দ্য গোস্ট কিংস - হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড |
ডাভ পরিবার যখন আফ্রিকাতে আসে তাদের পরিবারের লোক সংখ্যা ছিল তিন জন। র্যাচেল তার মা আর তার বাবা মি.ডাভ। সম্প্রতি তাদের পরিবারে নতুন একজন সদস্য যোগ হয়েছে আর সেটা র্যাচেলের সদ্য জন্ম নেয়া ভাই। কিন্তু এই ঘটনা যতটা না সুখকর তারচেয়ে বেশি কষ্টের কারণ। কয়েকদিনের মধ্যেই রেচেলের ভাইটির মৃত্যু হয়! কিন্তু কেনো?
প্রয়া প্রতিবার জন্ম নেয়া কোমলতম শিশু গুলো এই পরিবার থেকে বিদায় নিচ্ছে তাও জন্মের কয়েকদিনের মধ্যেই! এই পরিবারে সন্তান বলতে শুধুমাত্র রেচেলই বেঁচে আছে। তাহলে কি রেচেলে সবার চেয়ে আলাদা, অন্যকেউ?
নাকি মৃত্যুর ঘটনা গুলো ঘটছে কোনো অদৃশ্য অভিশাপে?
যৌবনের শুরুতেই র্যাচেল এর সাথে "রিচার্ড" এর দেখা তাও সেটা এক রকম অলৌকিক ভাবেই বলা চলে। এক সন্ধ্যায় যখন ঝড়ের মুখে পরে র্যাচেলের জীবন যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। ঠিক তখন'ই যেন ঈশ্বর প্রেরিত দূত হয়েই বাঁচাতে এলো রিচার্ড। আর এখান থেকেই দুজনের প্রতি দুজনার প্রেমে পরার শুরু। এই ঝড়ে যে রেচেল শুধু রিচার্ডকে পেয়েছে তেমনটাও না। এর সাথে সাথে একটা গুজবও ছড়িয়েছে আফ্রিকার আদিবাসী "জুলুদের" মধ্যে আর সেটার ফলে জুলুদের কাছে রেচেল হয়ে উঠেছে "ইনকোসাজানা" অর্থাৎ স্বর্গীয় কন্যা। যদিও ব্যাপারটা শুনতে বেশ ভালো হলেও আদতে কিন্তু তেমনটা না। এর ফলেই ধেয়ে আসছে র্যাচেলের জীবনে শত দুঃখ দুর্দশা।
কিন্তু কেনো?
জুলুদের কাছে র্যাচেল স্বর্গীয় কন্যা উপাধি পাওয়ার পর জুলু রাজা ডিলগান তাদের জুলুল্যান্ডের নিয়ে যেতে চাইলো র্যাচেলকে। সেটা সম্ভব? জুলুদের যে বর্বরতার দিক দিয়ে ব্যাপক খ্যাতি আছে আফ্রিকাতে। কিন্তু না গেলেও যে তার আর তার পরিবারের উপর আসতে পারে বড় ধরণের কোনো বিপদ!
র্যাচেল যদি জুলুল্যান্ডে যায়ও তাহলে তাকে যে জুলুদের নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করতে হবে। কেননা জুলুদের কাছে সে এক দেবী বলে গণ্য হওয়া শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।
র্যাচেল কি আসলেই তাই?
ও কি স্বর্গীয় কন্যা বা কোনো অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেবী?
এদিকে ইসমাইল নামে আরেক আপদের উদয় হয়েছে, সে চায় র্যাচেলকে তার বউ হিসেবে পেতে। আর এর ফলে তার হাতে চলে আসবে জুলুদের প্রতি শাসন করার বড় এক ক্ষমতা। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব? রিচার্ড যে এদিকে অনেক বছর পর ফিরে এসেছে র্যাচেলের কাছে। তাহলে, শেষ জয়টা কার হবে, র্যাচেলের সৎ ইচ্ছার নাকি ইসমাইলের অসৎ ইচ্ছার?
ইসমাইল যে র্যাচেলকে পেতে একপায়ে দাঁড়িয়ে অথবা হোক যেকোনো কিছুর মূল্যে!
আর এই সবকিছুর উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের "দ্য গোস্ট কিংস" বইটি।
মতামতঃ
হ্যাগার্ডের বইয়ের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা বরাবরই। তার সব বইই পড়ার সময় আমার মধ্যে নেশার মত কিছু একটা কাজ করে। আফ্রিকার বনজঙ্গল, আদিবাসী, জন্তুজানোয়ার, সাথে চরম রোমাঞ্চকর কাহিনীগুলো! এইসব কিছু যেন আমায় নেশা ধরিয়ে দেয়। আর এটা হ্যাগার্ডের মতো আর কজন'-ই বা পারে? এই বইটা আমার কাছে হ্যাগার্ডের আর পাঁচটা বইয়ের মতই লেগেছে। কাহিনীটাও ছিল এক কথায় অসাধারণ। যাদের পড়ার ইচ্ছা আছে তারা পড়ে দেখতে পারেন আশাকরি বইটা আপনায় হতাশ করবেনা।
বইটি রূপান্তর করেছেনঃ সাইফুল আরেফিন অপু
লিখেছেন
সাজিদা আক্তার